সোমবার, ২২ আগস্ট, ২০১১

জন্মাষ্টমী

জন্মাষ্টমী


শাস্ত্রীয় বিবরণ ও জ্যোতিষ গণনার ভিত্তিতে লোকবিশ্বাস অনুযায়ী কৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল ৩২২৮ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ১৮ অথবা ২১ জুলাই।কৃষ্ণের জন্মদিনটি কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী বা জন্মাষ্টমী নামে পালিত হয়।কৃষ্ণ যাদব-রাজধানী মথুরার রাজপরিবারের সন্তান। তিনি বসুদেবদেবকীর অষ্টম পুত্র। তাঁর পিতামাতা উভয়ের যাদববংশীয়। দেবকীর দাদা কংস  তাঁদের পিতা উগ্রসেনকে বন্দী করে সিংহাসনে আরোহণ করেন। একটি দৈববাণীর মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন যে দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তানের হাতে তাঁর মৃত্যু হবে। এই কথা শুনে তিনি দেবকী ও বসুদেবকে কারারুদ্ধ করেন এবং তাঁদের প্রথম ছয় পুত্রকে হত্যা করেন। দেবকী তাঁর সপ্তম গর্ভ রোহিণীকে প্রদান করলে, বলরামের জন্ম হয়। এরপরই কৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেন।
কৃষ্ণের জীবন বিপন্ন জেনে জন্মরাত্রেই দৈবসহায়তায় কারাগার থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়ে বসুদেব তাঁকে গোকুলে তাঁর পালক মাতাপিতা যশোদা  ও নন্দের কাছে রেখে আসেন। কৃষ্ণ ছাড়া বসুদেবের আরও দুই সন্তানের প্রাণরক্ষা হয়েছিল। প্রথমজন বলরাম (যিনি বসুদেবের প্রথমা স্ত্রী রোহিণীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন) এবং সুভদ্রা (বসুদেব ও রোহিণীর কন্যা, যিনি বলরাম ও কৃষ্ণের অনেক পরে জন্মগ্রহণ করেন)।ভাগবত পুরাণ অনুযায়ী, কোনো প্রকার যৌনসংগম ব্যতিরেকেই কেবলমাত্র "মানসিক যোগের" ফলে কৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, সেযুগে এই ধরনের যোগ সম্ভব ছিল।

[সম্পাদনা] বাল্য ও কৈশোর

গোবর্ধন গিরি হস্তে কৃষ্ণ
নন্দ ছিলেন গোপালক সম্প্রদায়ের প্রধান। তাঁর নিবাস ছিল বৃন্দাবনে। কৃষ্ণের ছেলেবেলার গল্পগুলি থেকে জানা যায়, কিভাবে তিনি একজন রাখাল বালক হয়ে উঠলেন,  কেমন করে তিনি মাখন চুরি করে দুষ্টুমি করতেন, কেমন করে তিনি তাঁর প্রাণনাশের চেষ্টাগুলিকে বানচাল করে দিতেন এবং বৃন্দাবনবাসীর জীবনরক্ষা করতেন। কৃষ্ণের প্রাণনাশের জন্য কংস পুতনা সহ অন্যান্য রাক্ষসদের প্রেরণ করলে, সকলকে বধ করেন কৃষ্ণ। কালীয় নামে একটি বিরাট সাপ যমুনার জলকে বিষাক্ত করে রেখেছিল। এই জল পান করে রাখাল ও গোরুর মৃত্যু হত প্রায়শই। কৃষ্ণ এই কালীয় নাগকে দমন করেন। হিন্দু চিত্রকলায় অনেক স্থানেই বহুফণাযুক্ত কালীয় নাগের মাথার উপর নৃত্যরত কৃষ্ণের ছবি দেখা যায়। কৃষ্ণের গোবর্ধন গিরি ধারণ করার উপাখ্যানটিও বহুপরিচিত। কৃষ্ণ বৃন্দাবনবাসীকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, অকারণে বৃষ্টির দেবতা ইন্দ্রের পূজা না করে পশুর দল ও পরিবেশের যত্ন নিতে। তাঁর মতে, এগুলিই বৃন্দাবনের সম্পদের উৎস। বৃন্দাবনবাসী ইন্দ্রের পূজা বন্ধ করে দিলে, ক্রুদ্ধ ইন্দ্র বৃন্দাবনকে প্লাবিত করতে চান। কৃষ্ণ গোবর্ধন গিরিকে এক আঙুলে ধারণ করে সমগ্র বৃন্দাবন ও তার সকল অধিবাসীদের রক্ষা করেন।[৪৬][৪৭] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে, প্রথাগত বৈদিক ধর্ম ও তার দেবদেবীর বিরুদ্ধে কৃষ্ণের এই অবস্থান, আধ্যাত্মিক ভক্তি আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হয়ে ওঠে।
বৃন্দাবনে গোপীদের নিয়ে কৃষ্ণের লীলাও ভারতীয় সাহিত্যের একটি জনপ্রিয় বিষয়। রাধার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে গীতগোবিন্দম্ রচয়িতা জয়দেব সহ অসংখ্য কবি প্রণয়মূলক কবিতা রচনা করেছেন। রাধাকৃষ্ণ মূর্তিতে কৃষ্ণের পূজা কৃষ্ণভক্তি আন্দোলনের বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন